শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন
খান মনিরুজ্জামানঃ বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডস্থ জগদ্বীশ সারস্বত গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো: শাহ্ আলমকে লাঞ্চিত করে তালাবদ্ব করে রাখার অভিযোগ উঠেছে একই স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।গতকার ৯ জুন সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক শাহ্ আলমকে তালাবদ্ধ করে আটকে রাখে একই স্কুলের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাওসার হোসেন ও গনিত বিভাগের শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন, ধর্মীয় শিক্ষক এমদাদুল্লাহ, শিক্ষিকা রজিনা মমতাজ নূপুর, রহিমা আক্তার লাকি, সন্ধা রানী ঘোষ, সীমা রানী মৃধা, ও সহকারী লাইব্রেরীয়ান নেহা বেগম।
ভূক্তভূগী প্রধান শিক্ষক বিষয়টি পুলিশ ও গনমাধ্যমকে জানায়। পরে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের এস,আই মুনীম ও সংবাদকর্মীদের চাপের মুখে একপর্যায়ে তালা খুলতে বাধ্য হয় অভিযুক্ত শিক্ষকরা।
এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো: শাহ্ আলম জানান- শিক্ষার্থীদের নিবন্ধনের কাজের জন্য আমি বিদ্যালয়ে আসি। সহকারী শিক্ষক কাওসার হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন সরকারী নিয়মকে তোয়াক্কা না করে সারা বছর কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
আমি তাদের’কে বিভিন্ন সময়ে নিষেধ করলেও তারা কোচিং চালিয়ে যাচ্ছিল। এ নিয়ে একাধিকবার তারা আমার সাথে তর্কও হয়।
তাই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সর্বশেষ নতুন ইসু তৈরী করে তারা। সেটি হল তাদের বেতন দেয়ার দাবী। তিনি বলেন,করোনার কারনে সরকারী নির্দেশে দ্বীর্ঘ ৩ মাস ধরে স্কুল বন্ধ ছিল। ফলে স্কুলের নিয়মিত আয় বন্ধ হয়েগেছে।
তাই বিদ্যালয়ের রানিং ফান্ড থেকে তাদের বেতন দিতে পারছিনা।অভিযুক্ত শিক্ষকরা আমার কাছে দাবী করেন ব্যাংকে স্কুলের কয়েক লক্ষ্য টাকা জমা আছে সেখান থেকে টাকা তুলে তাদের বেতন দিতে। কিন্তু আমি আইনের মারপ্যাচে পরে তাদের টাকা দিতে পারছিনা।
কারন আমার বিদ্যালয়ে ম্যানিজ্যিং কমিটি নেই প্রায় ৪ মাস ধরে। ব্যাংকের টাকা তুলতে হহলে কমিটির সভাপতি সম্পাদকের স্বাক্ষর লাগবে চেকে। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষে ৪ মাস পূর্বে আমি বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে একটি আহব্বায়ক কমিটির তালিকা করে পাঠিয়ে দিয়েছি।
কিন্তু এখন পর্যন্ত বোর্ড কতৃপক্ষ সেই কমিটির অনুমোদন দেয়নি। কমিটির জন্য আমি একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। তাতে কোন সুফল আসেনি। এতে আমার দোষ কোথায়? কিন্তু এই শিক্ষকরা উল্টো আমাকে অভিযুক্ত করছে যে, আমি না কি কমিটি পাশ করাচ্ছিনা।
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকরা স্থানীয় কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতায় তাদের মনোনীত লোককে সভাপতি করার লক্ষ্যে তাদের অপপ্ররোচনায় পরে আমাকে লাঞ্চিত করছে। যাতে করে আমি এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় হই। তাহলে তারা কোচিং বানিজ্য করতে পারবে।
প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করে আটকে রাখার বিষয়টি বরিশাল মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নাসরিন জুবায়দা জানতে পেরে তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ে আসে।
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করে আটকে রাখা ঠিক হয়নি, কমিটির আহব্বায়ক বা সভাপতি সম্পাদকের স্বাক্ষর ছাড়া প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেনা। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য শিক্ষক প্রতিনিধি ও থানা পুলিশের সদস্যকে সাথে নিয়ে প্রধান শিক্ষককে বোর্ডে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আর প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সতর্ক করে শাসিয়ে দেন। আমি এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠ বিচার চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে কথা বল্লে তারা বলেন, প্রধেন শিক্ষকের অবহেলা ও গোড়ামিমর কারনে কমিটি পাশ হচ্ছেনা। তাই আমরা আমাদের বেতন পাচ্ছিনা। আমরা বাধ্য হয়ে এই পদক্ষ্যেপ গোহন করেছি। কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের এস,আই মুনিম বলেন, প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করে আটকে রাখা হয়েছে এমন খবর পেয়ে আমরা তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্বার করি। তবে একজন প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করে আটকে রাখা বিষয়টি অন্য শিক্ষকদের ঠিক হয়নি।
যেহেতু শিক্ষা অফিসার বিষয়টি দেখবেন বলেছে তাই আমরা এখনই আইনি কোন পদক্ষেপ নেইনি। তবে প্রধান শিক্ষক যদি লিখিত কোন অভিযোগ করে তাহলে আমরা যথাযত আইনি ব্যাবস্থা গ্রহন করব।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেন বলেন- প্রয়াত সিটি মেয়র মরহুম শওকত হোসেন হিরন স্কুলের আসবাব পত্র তৈরির জন্য এই শিক্ষক কাওসার হোসেনের কাছে গত ২০১২ সালে একটি গাছ দেন।
তবে কাওসার হোসেন সেই গাছ স্ব’মিল থেকে আর স্কুলে আনেনি। সোজা নিয়ে যায় তার বাসায়। সে সময় সেই গাছটির মূল্য নির্ধারন করাহয় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। সেই টাকার হিসাব চাইতেই সাবেক ম্যনেজিং কমিটির সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেন’কে লাঞ্ছিত করেছে এই চক্রটি।
শুধু তাই নয় জানাযায়, সাবেক সভাপতি মো: আনোয়ার হোসেনকেও এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের করার ষড়যন্ত্র চালিয়ে ছিলো তারা।
শিক্ষকদের মধ্যে এমন গ্রুপিং ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।শিক্ষকদের মধ্যে এমন গ্রুপিং ও প্রধান শিক্ষককে লাঞ্চিত করার ঘটনায় স্থানীয় পর্যায়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a Reply